জুড়ী প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে শিশুমৃত্যুর জের ধরে এক্সপার্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. খালেদ সাইফুল্লাহর ওপর হামলা করেছেন নিহত শিশুর আত্মীয়-স্বজনেরা।
সোমবার রাত ৮টার দিকে উপজেলার ফুলতলা রোডের এক্সপার্ট হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় হাসপাতালের পরিচালক বদরুল ইসলাম ও ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন।
শিশুটির পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলার এক্সপার্ট হাসপাতালে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জাঙ্গিরাই গ্রামের ইতালি প্রবাসী রাজিব হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করার পর অপারেশনের মাধ্যমে তার এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকার পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নবজাতক শিশুসহ মাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যায় পরিবার। পরে নবজাতক শিশুটি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের লোকজন অন্যত্র চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শিশুটিকে ঢাকায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করার পর গত রবিবার সেখানে শিশুটি মারা যায়।
শিশুর মৃত্যুর পর তার চাচা সজিব আহমদসহ এলাকার অনেকেই শিশুটির মৃত্যুর বিষয়ে এক্সপার্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. খালেদ সাইফুল্লাহকে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন। সোমবার বিকেল ৫টার দিকে জানাজা শেষে শিশুটিকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে রাত ৮টার দিকে শিশুটির বিক্ষুব্ধ আত্মীয়-স্বজনরা হাসপাতালে এসে চিকিৎসক ডা. খালেদ সাইফুল্লাহকে মারধর করেন। এ সময় তারা হাসপাতাল ভাঙচুর করেছেন বলেও অভিযোগ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হামলার সময় চিকিৎসককে উদ্ধার করতে গিয়ে হাসপাতালের পরিচালক বদরুল ইসলাম ও ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে শিশুটির চাচা সজিব আহমেদ মুঠোফোনে বলেন, আমার ভাতিজার মৃত্যুর জন্য এক্সপার্ট হাসপাতালের ডা. খালেদ সাইফুল্লাহ দায়ী। ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই অকালে আমার ভাতিজার মৃত্যু হয়েছে। আমরা ওই ডাক্তারের বিচার চাই।
শিশুর আরেক চাচা ইমন আহমেদ বলেন, হাসপাতাল থেকে যখন ছাড়পত্র দেওয়া হয়, তখনও আমার ভাতিজার অক্সিজেন স্বল্পতা ছিল। কিন্তু ডা. সাইফুল্লাহ আমাদেরকে বিষয়টি না জানিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে ছাড়পত্র দিয়েছেন। আমার ভাতিজার মৃত্যুর জন্য ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাই একমাত্র দায়ী।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি জাঙ্গিরাই গ্রামের ইতালি প্রবাসী রাজিব হোসেনের গর্ভবতী স্ত্রীকে ভর্তি করার পর অপারেশনের মাধ্যমে একটি পুত্রসন্তানের জন্ম হয়। পরে ১৯ ফেব্রুয়ারি নবজাতক শিশুসহ মাকে ছাড়পত্র নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে যান পরিবার। এর মধ্যে শিশুটির শারীরিক অবস্থা নিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের সাথে আর যোগাযোগ করা হয়নি। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শিশুটি ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যায়। মারা যাওয়ার পর আমাদের হাসপাতালের কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেওয়ার পরও হাসপাতাল ও ডাক্তারের ওপর হামলা মেনে নেওয়া যায় না। এ ব্যাপারে আমরা জুড়ী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. অসিত দেবনাথ বলেন, ডা. সাইফুল্লাহকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার পর তার মাথায় দুটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তিনি বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে জুড়ী থানার ওসি (তদন্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, হাসপাতালে হামলার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply