বানিয়াচং প্রতিনিধি :: আসামি পক্ষের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা না পেয়ে তের বছরের এক শিশুকে বিশ বছর দেখিয়ে মামলার প্রতিবেদনে আসামি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ উঠেছে হবিগঞ্জের বানিয়াচং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহানুর ইসলামের বিরুদ্ধে।
উপ-পরিদর্শক শাহানুরের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তুলেছেন ১৩ বছরের শিশু মোফাচ্ছির ইসলামের মা শাহিনা বেগম। তবে নানা নাটকীয়তার পর রোববার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পেয়েছেন মোফাচ্ছির ও তার মা। মোফাচ্ছির ইসলাম বানিয়াচং উপজেলার ৮ নং খাগাউড়া ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের প্রবাসী আব্দুল আউয়াল মিয়ার ছেলে এবং স্থানীয় একটি হাফিজিয়া মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র।
মামলার তথ্য অনুসারে, মোফাচ্ছির ইসলামকে সিআর ২১১/২৪ (বানিয়াচং) মামলার পুলিশি প্রতিবেদন ও আর্জিতে ৩নং আসামি হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। পরে রবিবার আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ মমিনুল ইসলাম শিশু মোফাচ্ছির ইসলামকে জামিন দেন।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বিদেশ-সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখ বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসন আইনে শিশু মোফাচ্ছির, তার বাবা আব্দুল আউয়াল ও মা শাহিনা বেগমকে আসামি করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ৮ নং খাগাউড়া ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামের সাইফুল ইসলাম।
মোফাচ্ছিরের মা শাহিনা বেগম জানান, এই মামলায় তদন্ত করতে কয়েক দিন আগে বানিয়াচং থানার এসআই শাহানুর রাত আড়াইটার দিকে তাদের বাড়িতে আসেন। সেখানে তাঁর স্বামীকে না পেয়ে মোফাচ্ছিরসহ আরও দুই ছেলের জন্ম নিবন্ধন কার্ড নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাঁর কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। না দিলে তাঁর ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। রবিবার আদালতে গিয়ে দেখেন তাঁর ১৩ বছরের ছেলেকে ২০ বছর (সাবালক) দেখিয়ে মামলার আসামি করা হয়েছে। পরে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
মোফাচ্ছির ইসলামের জন্ম নিবন্ধন নং-২০১০৩৬১১১৫০১০১২০১। নিবন্ধন অনুসারে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন পর্যন্ত তার জন্ম তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০১০ইং অনুসারে বয়স ১৩ বছর ৭ মাস ২৭ দিন পাওয়া যায়।
এদিকে, ১৩ বছরের শিশুকে মামলার প্রতিবেদনে ২০ বছর দেখিয়ে আসামি শ্রেণিভুক্ত করার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় ওঠে আদালতপাড়ায়। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন আইনজীবীরা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তফা মিয়া বলেন, বিষয়টি রীতিমতো অন্যায়। মনে হচ্ছে পুলিশ (এসআই শাহানুর ইসলাম) ঘটনাটি সরেজমিন তদন্ত করেনি। কোনো বিবেকবান মানুষ হলে এমন কাজ করতে পারতেন না। আর মামলা যেহেতু বিদেশে লোক পাঠানো (বৈদেশিক কর্মসংস্থান আইন) বিষয়ে, সেখানে একটা শিশুর কিছুই করার নেই। এসআই শাহানুর ইসলাম শিশু মোফাচ্ছিরের বিরুদ্ধে দোষীপত্র দিতে পারতেন। তা না করে ইচ্ছাকৃত তার বয়স বাড়িয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, ওই বিষয়টি দুঃখজনক।
এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার এসআই শাহানুরের সঙ্গে কথা বলার জন্য তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার কল করে ও খুদে বার্তা দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বানিয়াচং সার্কেল) পলাশ রঞ্জন দে জানান, এমন কিছু ঘটে থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply