জাগ্রত সিলেট ডেস্ক :: টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার প্লাবিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। পানি নেমে যেতে শুরু করলেও দুর্ভোগ কিন্তু রয়েই গেছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়া অনেক মানুষ এখনও মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার অচলাবস্থাও দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।
সিলেট জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনই নিজের বাসাবাড়িতে ফিরতে পারছেন না আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরতরা। নদ-নদীর পানি কমলেও ধীরগতিতে কমছে নিম্নাঞ্চলের পানি। ফলে তলিয়ে রয়েছে নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়ি। আর এতে বাড়ি ফেরার সময় দীর্ঘায়িত হচ্ছে বন্যাকবলিতদের। গত কয়েকদিনে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি কমেছে।
গত ২০ জুন থেকে সিলেটে অতিবৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢল কমে আসায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে থাকে। নদী ও হাওরে পানির উচ্চতা কমলেও সিলেট নগরীর যতরপুর, চালিবন্দরসহ কয়েকটি এলাকার নিম্নাঞ্চলের জলাবদ্ধতা কাটেনি। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষের জন্য সিটি করপোরেশন থেকে খাবারসহ অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে নগরভবন কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সুনামগঞ্জ জেলায়ও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় এলজিইডির প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক পানির নিচে চলে গেছে। কয়েকটি সড়ক ওয়াসআউট হয়ে গেছে। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর আউশ ধান ও ৫৬৭ হেক্টর সবজি। এছাড়াও প্রায় ৩৯ লাখ টাকার পশুখাদ্যের ক্ষতি হয়েছে।
এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, জেলার প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার সড়ক এখনও পানির নিচে আছে। পানি কমলে ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হবে। পানি না নামলে ক্ষয়ক্ষতি বোঝা যাবে না। জাউয়া-ছাতক আন্ডার রিভার সড়ক, পাগলা-কালীগাঁও সড়ক, কাটাখালী সড়ক ওয়াসআউট হয়েছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন বলেন, নষ্ট হওয়া সড়ক মেরামত করতে ৬০-৭০ কোটি টাকার প্রয়োজন।
সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, কমপক্ষে ১০ কিলোমিটার সড়কের বেশি ক্ষতি হয়েছে। এসব মেরামত করতে ৮০-৯০ কোটি টাকা প্রয়োজন। আপাতত সচল রাখার জন্য সোয়া কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সুনামগঞ্জের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে পানি নেমে গেলে ডুবে যাওয়া ধান নষ্ট হবে না। গ্রীষ্মকালীন ৫৬৭ হেক্টর সবজি পানিতে তলিয়েছে। তবে এর আগে ৮০ ভাগ সবজি কৃষকরা তুলে বিক্রি করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর এবং বিশ্বম্ভরপুরে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছাতকে ১৭ লাখ, দোয়ারাবাজারে ১০ লাখ, তাহিরপুরে ৭ লাখ এবং বিশ্বম্ভরপুরে ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ছাতকে দুটি প্রাণী মারা গেছে। মূল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পশুখাদ্যের।
Leave a Reply