এহিয়া আহমদ :: দেশের ঐতিহ্যবাহী প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা সিলেট। সোমবার মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের আরেকটি উৎসবের দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার পরও সিলেটে এখনও জমে ওঠেনি কোরবানীর পশুর হাট। তবে ব্যবসা জমে ওঠার প্রহর গুণছেন পশুর হাটের বিক্রেতারা। সাধারণত সিলেটে কোরবানীর পশুর হাট জমে ওঠে ঈদের দু-তিনদিন আগে থেকে। কোরবানীর আগে আগে গরু কিনে বাসা-বাড়িতে রাখার অসুবিধা থাকার কারণে ঠিক ঈদের আগের দিনটাকেই বেছে নেন বেশিরভাগ ক্রেতারা। অন্যদিকে বৃষ্টিতে বেহাল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় হাটগুলোতে প্রভাব পড়ছে। বৃষ্টির কারণে পশুর হাটের কোথাও কোথাও জমেছে পানি। আবার কোথাও কোথাও কাদা জমে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে বিপাকে পড়ছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সিলেটে পশুর হাটগুলোতে আসছে কোরবানীর পশু। এরমধ্যে নগরীর কাজিরবাজার হাটে মহিষ, ভেড়া, ছাগলসহ রয়েছে বাহারি রঙের বড় বড় গরু। বাদ পড়েনি বিদেশি পশু দুম্বাও।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, খামারিদের কাছে রয়েছে হরেক রকমের নামধারী গরু। কোনোটি ‘নায়ক জায়েদ খানের চাচা’, ‘বিগ বস’, ‘বাদশা’, ‘রাজা বাদশা’, ‘শান্ত’, ‘লিটন’সহ রয়েছে নানা রকমের অদ্ভুত নামের গরু। এছাড়া বাজারটিতে বিশালাকৃতির মহিষ ওঠেছে- যার নাম ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’। বাহারি রঙের বাহারি আকারের পশু দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় নগরীর কাজিরবাজারে। অদ্ভুত সব বাহারি নামের পশু আকর্ষণ বাড়াচ্ছে পশুর হাটের। তবে পশু সরবরাহ থাকলেও বেচাকেনা এখনও জমে ওঠেনি নগরীর হাটগুলোতে। হাল ছাড়ছেন না ব্যবসায়ী ও খামারিরা। তাদের প্রত্যাশা, কোরবানীর একদিন আগে হলেও আশানুরূপ দামেই বিক্রি করতে পারবেন তারা। সেই স্বপ্নে খামারি ও ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন অপেক্ষায়। নগরীর সবকটি বাজারসহ উপজেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে বসা হাটগুলো ক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম থাকলেও দাম সাধ্যের বাইরে থাকায় অনেক ক্রেতারা দাম কমার অপেক্ষায় রয়েছেন। তবে, দুই একদিনের মধ্যে ক্রেতারা কোরবানীর পশু কিনতে শুরু করবেন বলে মনে করছেন হাটে পশু বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেটের বৃহত্তম গরুর হাট কাজিরবাজার। কাজিরবাজারে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি রয়েছে। রয়েছে জাল টাকা শনাক্তকরণ বুথ। এছাড়া সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের ১৪টি মোবাইল টিম নজরদারিতে রাখছে পুরো বাজার।
হাটে ঘুরে কথা হয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে। ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। লোক সমাগম প্রচুর হলেও বেচাকেনা এখনও জমে ওঠেনি বলে জানালেন একাধিক বিক্রেতা। তবে ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলে পশুর হাটের ভিড়ও আস্তে আস্তে বাড়বে বলে আশা করছেন বিক্রেতারা। শেষ মুহ‚র্তে আরও বেশি ভিড় বাড়বে এবং রাতব্যাপী চলবে বেচাকেনা- এমনটা জানান হাট কর্তৃপক্ষ।
গরু ব্যবসায়ী ও খামারিরা বলছেন, পশুর হাটে ক্রেতা কম থাকায় বর্তমানে বিক্রি কম। তবে ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে বাড়তে পারে বেচাকেনা। তাদের দাবি, এখন যারা আসছেন তারা অধিকাংশই দর্শনার্থী। দাম যাচাই-বাছাই করতে বাজার ঘুরছেন তারা। ক্রেতা হিসেবে যারা বাজারে ঘুরতে আসছেন তাদের নজর আটকাচ্ছে সবচেয়ে বেশি মাঝারি ও ছোট আকারের গরুর দিকে।
বিক্রেতারা বলছেন, ভুষি, খৈল, পালিশ, ভুট্টা ও গরুর বিভিন্ন ওষুদের প্রচুর দাম। পশুর খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ঈদের আর বাকি মাত্র দুইদিন। কিন্তু এখন এমন অবস্থা, গত বছরের থেকে বেশি দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে ব্যবসায় লোকসান হয়ে যাবে।
সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সিলেট সিটি করপোরেশন নগরীতে ৮টি হাটের ইজারা দেয়। ১৩ জুন থেকে পাঁচদিন নগরীর মেজরটিলা বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠের পেছনের অংশ, নতুন টুকেরবাজার (তেমুখী পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা), মাছিমপুর কয়েদির মাঠের খালি জায়গা, শাহপরাণ পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, টিলাগড় পয়েন্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন এস ফল্ট মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার ট্রাক টার্মিনালে কোরবানীর অস্থায়ী পশুর হাট ইজারা দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলার আওতাধীন ৯টি উপজেলায় ৪৩টি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসনের স্থানীয় সরকার বিভাগ। এরমধ্যে সিলেট সদর উপজেলায় ৪টি, দক্ষিণ সুরমায় ১টি, বালাগঞ্জ উপজেলায় ৬টি, বিশ্বনাথ উপজেলায় ৮টি, ওসমানীনগর উপজেলায় ২টি, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৫টি, বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৯টি, জকিগঞ্জ উপজেলায় ৭টি ও কানাইঘাট উপজেলায় ১টি হাট রয়েছে। অনুমোদন শেষে বৃহস্পতিবার থেকে কিছু কিছু স্থানে কোরবানীর পশু বেচাকেনা শুরু হয়। এদিকে সিলেটে পশুর হাট অনুমোদনের পর বাজার জমে ওঠতে শুরু করলেও বিক্রেতার অভাব রয়েছে হাটগুলোতে। শেষ সময়ের বেচাকেনার অপেক্ষায় ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে এবার কোরবানীর ঈদে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫১টি পশুর চাহিদা রয়েছে। তবে বিভাগজুড়ে কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭টি গবাদি পশু। উদ্বৃত আছে ৩৬ হাজার ১৪৬টি পশু।
কোরবানীর হাটের ইজারাদাররা জানান, ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে, হাটে তত ভিড় বাড়ছে ক্রেতা-বিক্রেতার। আশা করছি সময়ের সাথে সাথে বাড়বে বেচাকেনা। আমরা বিক্রেতাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রেখেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি ও জাল টাকা শনাক্তের জন্য মেশিনের ব্যবস্থা রয়েছে।
কাজিরবাজারের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন জানান, বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সুবিধার্থে বেচাকেনার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যদি আবহাওয়া খারাপ না হয় এবং রাস্তাঘাটে গরু আসতে কোনো বাধার সৃষ্টি না হয় তাহলে বেচাকেনা ভালোই হবে এবার।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ১৩ জুন থেকে পাঁচ দিন সিলেট নগরীতে আটটি কোরবানীর পশুর হাট ইজারা আহবান করা হয়। সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত আটটি পশুর হাট ব্যতীত অবৈধ হাট বসতে দেওয়া হবে না। কেউ অবৈধ হাট বসালে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, কোরবানীর পর দ্রুত বর্জ্য অপসারণ করবে সিসিক। হাট চলাকালে শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে সার্বক্ষণিক পরিষ্কার অভিযান চালানো হবে। ঈদের দিন নির্ধারিত স্থানে কোরবানীর বর্জ্য ফেলার জন্য নাগরিকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
Leave a Reply