নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেট মহানগরীর ইসলামপুর চামেলীবাগ আবাসিক এলাকায় টিলা ধসের ঘটনায় ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- আগা করিম উদ্দিন, তার স্ত্রী রুজি বেগম ও তাদের দুই বছর বয়সী শিশুসন্তান তানিম।
এর আগে সোমবার ভোর ৬টার দিকে এই টিলা ধসের ঘটনাটি ঘটে। এই বাসায় ২টি পরিবার থাকতেন। ভূমি ধসে ঘরের নিচে একই পরিবারের ৬ জন আটকা পড়েছিলেন। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ৩ জনকে মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, ভারি বৃষ্টিতে সোমবার ভোর ৬টায় চামেলীবাগ এলাকার ২ নম্বর রোডের একটি টিলা ধসে ৮৯ নম্বর বাসার উপরে পড়ে। এতে ওই বাসায় ভাড়া থাকা ছয় সদস্য ঘুমন্ত অবস্থায় মাটির নিচে চাপা পড়েন। তিনজনকে তাৎক্ষণিক জীবিত উদ্ধার করা হয়। তাদের আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আরও তিনজন তখন নিখোঁজ থাকেন। সকাল ৭টা থেকে তাদের উদ্ধারে অভিযানে নামে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। সিটি করপোরেশনের কর্মীরাও তাদের উদ্ধারে অভিযানে নামে। তবু তাদের সন্ধান মিলছিলো না। এরপর বেলা ১২টার দিকে অভিযানে যোগ দেয় সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনী অভিযানে নামার কিছুক্ষণের মধ্যে মাটিচাপা অবস্থায় তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, চামেলীবাগ এলাকায় টিলা ধসে একই পরিবারের ছয়জন মাটিচাপা পড়েন। তাদের মধ্যে এক ভাই, তার স্ত্রী এবং মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। অপর ভাই ও তার স্ত্রী-সন্তানকে দুপুরের দিকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কাউন্সিলর জানান, বৃষ্টির কারণে উদ্ধার অভিযান কিছুটা ব্যাহত হয়। এছাড়া রাস্তা ছোট হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সিটি করপোরেশনের গাড়ি ঢুকতে পারেনি। তাই হাত দিয়েই উদ্ধার কার্যক্রম চালানো হয়। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট কাজ করেছে। সঙ্গে পুলিশ, সিসিক কর্মী ও স্থানীয়রা সহযোগিতা করেছেন। পরে সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজে যোগ দেয়।
এসএমপি’র শাহপরাণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ চৌধুরী বলেন, তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে, সোমবার সকালে যুক্তরাজ্য থেকে ফিরেই সরাসরি দুর্ঘটনাস্থলে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার গলিটি অত্যন্ত সরু। যে কারণে ফায়ার সার্ভিস ও সিসিকের গাড়ি বা মাটি কাটার যন্ত্র ঢুকানো যাচ্ছে না। তাই উদ্ধার তৎপরতা চালাতে সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এর কিছুক্ষণ পরেই উদ্ধারকাজে যোগ দেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেটের তথ্য মতে, গত তিনদিন ধরে সিলেটে ভারি বর্ষণ হচ্ছে। শনিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। রবিবার ভোর ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এতে সিলেট নগরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া নগরীর উপকণ্ঠে টিলা ধসের শঙ্কা তৈরি হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নিতে কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
Leave a Reply