নিজস্ব প্রতিবেদক :: সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে পিয়াইন নদী ইজারা নিয়ে ইজারা বহির্ভূত কোম্পানীগঞ্জ ও ছাতক উপজেলার সরকারি ভূমিসহ কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে চলছে বালু লুট। এতে হুমকির মুখে পড়েছে কয়েকশ’ একর সরকারি ভূমি ও কৃষি জমি। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে বিভিন্ন স্থাপনাও।
অবৈধভাবে ডিসি খতিয়ানের ও বন বিভাগের ভূমি থেকে বালু উত্তোলনের কারণে প্রতিদিন সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। এছাড়াও একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট বালু লুট করে রয়্যালিটির নামে প্রতি ঘনফুট বালু থেকে ৫ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। প্রতিদিন যার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকা।
জানা যায়, চাটিবহর গ্রামের পূর্ব পাশে দিনের বেলা খালি থাকা স্টিলবডি নৌকা মেপে টাকা আদায় করেন ইজারাদার সুজন মিয়ার লাঠিয়াল বাহিনী। পরে দিনে ও সন্ধ্যা এবং রাত আটটার পর প্রতিদিন ওই স্টিলবডি নৌকাগুলোতে ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু লোড শুরু হয়।
দীর্ঘদিন ধরে চক্রটি এভাবে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও নীরব ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। স্থানীয়রা বাধা দিলে উল্টো তাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। এমনকি বালু লুটকারীরা তাদের নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে তাদের হুমকি-ধামকিও দিয়ে যাচ্ছেন।
এ পরিস্থিতিতে পিয়াইন নদীর বালুমহাল ইজারাদার উপজেলার চাটিবহর (আমবাড়ি) গ্রামের মৃত তৈমুছ আলীর ছেলে সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই উপজেলার গৌখালেরপাড় গ্রামের আকবর আলীর ছেলে আকদ্দছ আলী।
অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ১৪৩১ বাংলা সনের জন্য পিয়াইন নদী বালুমহাল ইজারা গ্রহণ করেন সুজন মিয়া। তিনি ছোট সাতবিলা ও বড় সাতবিলা এবং গোয়া পাগুয়া গ্রুপ জলকরপুঞ্জ জলমহাল ইজারাও গ্রহণ করেন। কিন্তু পিয়াইন নদী বালুমহাল ছাড়া ইজারা বহির্ভূত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলাধীন শিমুলতলা মৌজা ও ছাতক উপজেলাধীন রাজেন্দ্রপুর এবং বাহাদুরপুর মৌজার অন্তর্গত বাইরং নদী (বহর নদী) ও চলিতার ঢালাসহ তৎপার্শ্ববর্তী ইজারা বহির্ভূত সরকারি ও বন বিভাগের ভূমি থেকে বেআইনীভাবে বালু লুট করাচ্ছেন।
অভিযোগে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ইজারাদার সুজন মিয়া সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার গণেশপুর নোয়াগাঁও গ্রামের মৃত ফরিদ উদ্দিনের ছেলে বুলবুল (৫৫), একই উপজেলার বাগবাড়ী এলাকার মৃত ছামাদ চৌধুরীর ছেলে রাসেল চৌধুরী (৪৫), সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর পূর্বপাড়ার মৃত ফজর আলীর ছেলে কিতাব উদ্দিন (৪৮) ও একই এলাকার মৃত মেনজা মিয়ার ছেলে ময়না মিয়া (৪০)সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮/৯ জন লাঠিয়াল বাহিনী দ্বারা অবৈধ লিস্টার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ ঘনফুট বালু লুট করছেন।
শুধু তাই নয়, ইজারা বহির্ভূত ডিসি খতিয়ান ও বন বিভাগের ভূমি থেকে বালু লুট করিয়ে রয়্যালিটির নামে প্রতি ঘনফুট বালু থেকে ৫ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন। প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ লাখ টাকার চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, অবৈধভাবে বালু লুট করার কারণে ডিসি খতিয়ান ও বন বিভাগের ভূমিসহ আশপাশ এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় কয়েকশ’ একর কৃষি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে বিভিন্ন স্থাপনাও।
অভিযোগে আকদ্দছ আলী উল্লেখ করেন, উপজেলার চাটিবহর, কাঁঠালবাড়ী ও লম্বাকান্দি গ্রামের বাসিন্দাদের অনুরোধে গত ৩ জুন (সোমবার) স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বালুমহাল ইজারাদার সুজন মিয়ার সাথে কথা বলেন। এসময় ইজারা বহির্ভূত কৃষি জমিসহ ডিসি খতিয়ান ও বন বিভাগের ভূমি থেকে অবৈধভাবে বালু লুট না করার অনুরোধ জানানো হয় তাকে। কিন্তু ইজারাদার উল্টো তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আকদ্দছ আলীকে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করেন। এতে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এবং যেকোনো সময় ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন।
এ ব্যাপারে জানতে বালুমহাল ইজারাদার সুজন মিয়ার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, বালু লুট নিয়ে অভিযোগের একটি কপি আমার হাতে এসেছে। এটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) অভিযানে গেলে বালু লুটকারীরা পালিয়ে যায়। তবুও তিনি অভিযান অব্যাহত রেখেছেন।
সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা মুন্না বলেন, ইজারা বহির্ভূত জায়গা থেকে বালু উত্তোলনের অভিযোগের একটি কপি আমার কাছেও এসেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমরা অভিযানে যাই। কিন্তু আমাদের যাওয়ার খবর পেয়ে বালু লুটকারীরা পালিয়ে যায়। মূলত: তারা রাতের বেলা এ কাজ করে। প্রশাসনের খবর পেলেই সটকে পড়ে। তিনি বলেন, ইজারাদারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে আমরা কোনোভাবে ছাড় দেবো না। কাউকে হাতেনাতে পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ আহমেদ বলেন, শনিবার সারাদিন অভিযোগকারীকে নিয়ে পিয়াইন নদী পরিদর্শন করেছি। কোথাও বালু লুটকারীদের দেখা যায়নি। রবিবার ইজারাদার ও অভিযোগকারীকে ডাকা হয়েছে। যেভাবেই হোক ইজারা বহির্ভূত এলাকা থেকে বালু লুট বন্ধ করা হবে।
Leave a Reply